শ্বাশুড়ি মা

    •  শ্বাশুড়ি মা

ছয় মাসের বাচ্চাকে ঘুম পাড়াতে গিয়ে আমি নিজেই  ঘুমিয়ে গিয়েছি,যখন ঘুম ভাঙলো তখন ঘড়িতে প্রায় দুপুর দুইটা বাজে,তাড়াহুড়া করে চুলগুলো হাত খোঁপা করতে করতে খাট থেকে নামলাম।মাথায় একটাই চিন্তা আমি এখনও  রান্না করিনি।এমনিতেও বিয়ের পর থেকে আমার কখনো রান্না করতে হয়নি।আমার শাশুড়ি মা নিজেই রান্না করেন এবং আমাকে মাঝে মাঝে মুখে তুলে খাইয়ে দেন।আমি রান্না করতে চাইলে বলতেন আগে আরো বড় হও তারপর রান্না করে আমাকে খাওয়াবে ।

আজকে অনেক শখ করে বলেছিলাম : আম্মা আজকের রান্নাটা আমি করতে চাই।

আমার আকুলতা দেখে তিনি আর না করতে পারেননি, রাজি হয়ে যান । 

রান্নার জন্য সব কাটাকাটি করার পর চাল ধোয়ার সময় মেয়েটা কেঁদে ওঠে,তখন আমার শাশুড়ি বলেন: আগে ওর কান্না থামাও , ঘুমাবে মনে হয় । 

আমি ওকে নিয়ে ঘুম পাড়াতে গিয়ে নিজেও ঘুমিয়ে গেলাম । এখন কী হবে ? দুইটা বাজে, রান্না তো করিনি আম্মা কী খাবে ? আমার নিজের কাছেই নিজেকে ছোট মনে হচ্ছে , একটা কাজও আমি ঠিক মত করতে পারিনা । রুম থেকে বের হয়ে কোন দিকে না তাকিয়ে রান্না ঘরের দিকে দিলাম দৌড় , তাড়াতাড়ি রান্না করতে হবে । গিয়ে দেখি বড় ভাবী রান্না করছেন , আমাদের হাঁড়ি-পাতিল কিছুই রান্না ঘরে নেই । 

 বড় ভাসুর থাকেন সিঙ্গাপুর বড় ভাবী আমার বিয়ের দুই সপ্তাহ পরই আলাদা হয়ে যান। আমরা সবাই এক বাড়িতে থাকি এবং  এক রান্নাঘরেই রান্না করি । 

আমি চিন্তিত হয়ে  ঘরে যাওয়ার সময় আমার শাশুড়ির সাথে দেখা হয় তিনি মাত্রই কলপার থেকে গোসল করে কাপড়ের বালতি হাতে এদিকেই আসছেন । আমাকে দেখে কিছু না বলে তিনি কাপড় শুকাতে দেন।  চুপচাপ দাড়িয়ে আছি কি করবো বুঝতে পারছি না , তিনি কি আমার সাথে রাগ করেছেন ? আমারই বা কী দোষ কিভাবে ঘুমিয়ে গেলাম জানিনা , এখন যদি তার জায়গায় আমার মা থাকতো তাহলে কি রাগ করতো? 

ভাবনার মাঝেই তার ডাকে আমি চমকে উঠলাম ।

তিনি মুচকি হেসে বললেন : রান্না করবেনা? 

আমি অসহায় মুখে তার দিকে তাকিয়ে বললাম : জ্বী,করবো । 

তিনি আবারও চমৎকার ভাবে হেসে বললেন : যাও খওয়ার ঘরে যাও গিয়ে খেতে বসো আমি নামাজ পড়ে আসছি । 

তিনি নামাজের ঘরে চলে গেলেন আর আমি অবাক হয়ে তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি । 

সত্যিই কি শাশুড়ি মা এমন হয়? তারপর নিজে নিজেই বললাম হ্যা হয় , এইযে আমার শাশুড়ি মা এমন । 


সমাপ্ত ...


মন্তব্যসমূহ